আহমেদ মুর্তজা

গাজা শহরে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণকারী একজন লেখক। তিনি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং শহরের অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। ২৪ অক্টোবর একটি বোমা হামলায় তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বেঁচে যান এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বেরিয়ে এসে লেখা চালিয়ে যান।


১১ অক্টোবর, 12:12 AM

যুদ্ধের কালে,

রাত্রিগুলি প্রতিযোগিতা করে, কোনটি আমাদের উপর সবচেয়ে কঠোর হবে।

১৩ অক্টোবর, 12:56 AM

হ্যালো. গাজা থেকে আহমেদ বলছি।

আমার চিন্তা হয় যে আমার নাম ব্রেকিং নিউজ হয়ে উঠবে, যা বলবে: "...বিভিন্ন এলাকায় সহিংস বোমা হামলার সময় X টি নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে" এবং আমার জীবনটা কাউন্টারের একটি নিস্তেজ সংখ্যা হয়ে যাবে, যেই কাউন্টারে এখনো গণনা বন্ধ হয়নি। আমি চাই না যে আমার এবং আমার পরিবারের নাম শুধু এক সংখ্যায় পরিণত হোক, না জোড় না বিজোড়।

আমার অনেক স্বপ্ন আছে, যেমন, গাজার বাইরে বৃহৎ বিশ্বে ভ্রমণ করা...তাকে আবিষ্কার করা, অন্যদের সাথে আমার ভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করা, এবং ইন্টারনেটে দেখা দৃশ্য, ছবি এবং অভিজ্ঞতাগুলি সত্যই বিশ্বাস করা, যা গোটা বিশ্বের বৈচিত্র্যতা দেখায়।

আমি এখন আপনার সাথে কথা বলছি, বাইরে কি ঘটছে তার কোন তথ্য না জেনে। বাইরে বলতে আমার বাড়ির বাইরে - যেখানে আমরা ফিরে এসেছি, যেই এলাকায় কয়েকদিন আগে বোমা হামলা করা হয়। কারো সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম নেই। বোমা হামলার শব্দ এখনো থামেনি, এবং বোমাগুলির আলো এলাকাটাকে আলোকিত করছে, অজানার সতর্কতা দিচ্ছে। 

আমার সবচেয়ে ভয় হয় যে সবকিছুই যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে যাবে: স্বাভাবিক যে বাড়িটি বোমা বিস্ফোরিত হয়, অস্বাভাবিক যে একটি আগাম সতর্কতা পায়নি। স্বাভাবিক যে শিশুটি মারা যায়, অস্বাভাবিক যে সে চিৎকার করে মারা যায়... এবং এরকম আরও অনেক কিছু, যা একটি টেক্স্টে আটবে না।

আমি আহমেদ, এবং আমার বন্ধুরা আমাকে ডাকে (আসেম/আসুমি)। যাইহোক, আমি আমার বন্ধুদের খবর খুব বেশি জানি না। যখনই আমি অনলাইনে যাবার সুযোগ পাই তখনই আমি ছোট ভিডিওর মাধ্যমে তাদের খবর নেই। আমি সমস্ত চেহারা চেক করি, এবং স্বস্তি পাই যে আমার বন্ধুরা তাদের মধ্যে নেই। কিন্তু একই সময়ে আমি বুঝতে পারি যে ছবি এবং ভিডিওগুলিতে যারা রয়েছে তারাও কিন্তু আসলে আমার বন্ধু... তাই আমি কাঁদি।

আমি আহমেদ, এবং শৈশব থেকেই আমি আরবি এবং ব্যাকরণ পাঠ ঘৃণা করতাম। দুটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন আমি ঘৃণা করি। আমি উত্তর ঘৃণা করি, এবং প্রশ্ন ভালবাসি। দুই দিন আগে একটি প্রশ্ন দেখে আমি থেমে পরি: 'উত্থান এবং যুদ্ধের মধ্যে পার্থক্য কী?' আমি ভাবলাম, যদি ফলাফল একই হয়, তবে এই প্রশ্নের গুরুত্ব কী: একজন মা কাঁদছে এবং একটি শিশু চিৎকার করছে... যদি কান্নাকাটি এবং চিৎকার করার সুযোগ থাকে।

আমি আহমেদ এবং আমি ভয় পাচ্ছি যে আমি মারা যাব এবং একটি সাধারণ সংখ্যা হয়ে যাব, এবং লেখাটি সম্পূর্ণ করার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

17 অক্টোবর, 11:15 অপরাহ্ন

ফেসবুক আমাকে জিজ্ঞেস করে ‘কী ভাবছো ?’…খোদার কসম, আমি সর্বক্ষণ  এটাই ভাবি যে, এই মুহুর্ত পর্যন্ত যে আমরা বেঁচে আছি তা একদম পুরো এক সমাপতন।

এবং আমরা যে সংখ্যাগুলি দেখি, তা বেদনাদায়ক এবং আমাদের কাঁদায়; এ পর্যন্ত চার হাজার শহীদ… চার হাজার গল্প, স্মৃতি, কাহিনী ও উপকথা। লেখা বা কথা বলার দরকার নেই; আমাদের চিৎকার ও কান্না মৃতরা শুনতে পায়।

এবং, ওহ ফেসবুক, আমরা যে সত্যই মারা গেছি তা নিশ্চিত করতে তারা কতবার আমাদের মেরেছে, এবং আমাদের ভিতরে যা ছিল, তাও আমাদের সাথে মারা গেছে।

এবং প্রতিদিন আমরা জেগে উঠি, নিজেদেরকে গণনা করি এবং আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কে কে বেঁচে আছে  তা গণনা করি… নিজেদেরকে সাব্বাস বলি , মনকে শক্ত করি  এবং বেঁচে থাকার লড়াই যা বাকি আছে তাতে মগ্ন হই।

আমি নিজেকে আরেকটি প্রশ্ন করি: গাজায় আসলেই কোনো নিরাপদ জায়গা আছে কিনা। আমার বন্ধুরা গাজার ভেতরে ও বাইরে মারা গেছে। বলুন, প্লিজ, আমরা কোথায় যাব!

কেউ কি আপনাকে আগে বলেছে যে আমরা সুপারহিরো? সিরিয়াসলি, কে বলেছে? আমরা যা করার চেষ্টা করছিলাম এবং এখনও করছি, তা হল এই জীবনকে সহনীয় করে তোলা। এটা কি পৃথিবীর জন্য এতই কঠিন কাজ? এটা কি খুব বেশি চাওয়া?

২০ অক্টোবর, 7:52 pm

আমি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমি নিজেকে ভয় পাই।

আমি কিছুই অনুভব করি না, খবর শুনে আশ্চর্যিত হই না, আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে না।

আমি এত স্বাভাবিক ভাবে সংখ্যা পড়া শুরু করলাম। (কেমন আছ?) জিজ্ঞেস করলে আমি অনেক মিথ্যা বলি। আমি কেমন আছি তাতে আমার কনো য়ায় আসে না।

আমাদের নিয়ে কে লেখে বা না লেখে তাতে আমার কিছু যায় আসে না, এই লেখার কি লাভ, যখন প্রতিটা শব্দের সাথে সাথে একজন বন্ধু হারিয়ে যায়?

আমাদের মাথায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে পড়া স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হরদম উৎপাটন হওয়ার দৃশ্য গুলো নিয়ে আমি এখন খুব একটা ভাবি না, পরিকল্পনাও করি না।

দিনগুলো অনেক একই রকম হয়ে গেছে, আর শেষ কবে যে হেসেছিলাম তা মনে নেই। আমরা কি আগে হাসছিলাম, নাকি নিজেদের সামনেই হাসার ভান করছিলাম?

বাড়ি ওপর বোমা হামলার দৃশ্য আমাকে দুঃখ দেয় না...আসলে আমি লজ্জিত যে আমাদের বাড়িটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

এখন আমি নিজেকে ভয় পাই, যুদ্ধকে নয়।

এখন আমি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি যে এই যুদ্ধ আমাদের সবকিছু হত্যা করেছে, এমনকি আমাদের বিস্ময় এবং দুঃখের অনুভূতিকেও।

২৩ অক্টোবর, 9:17 pm

আমি আমার সমস্ত শহীদ বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চাই, কারণ আমাদের কাছে শোক করার খুব বেশি সময় নেই, যখন জিজ্ঞাসা করো কেন আমাদের দুঃখ শুধু মাঝে মাঝে তাদের কাছে পৌঁছায়, আমরা শিখেছি যে যুদ্ধ চলাকালিন আমাদের দুঃখ পাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে, তাই আমাদের দুঃখের ক্ষুদ্র টুকরো পাচ্ছো ।

আমি নিজের কাছে এবং আমার বন্ধুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, তোমাদের খবর নেয়ার সময় না পাওয়ার জন্য, যেহেতু যুদ্ধ আমাদের সময় এবং বিশ্রাম কেড়ে নিয়েছে, এবং যুদ্ধে কোন সময় নেই।

আমি সমস্ত বাচ্চাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আসলেই কী ঘটছে তা তোমাদের বুঝিয়ে বলা, বা তোমাদের ছোট হৃদয় যখন প্রচণ্ড বিস্ফোরকের মুখোমুখি হয় তখন কী করতে হবে, তা বলার জন্য আমার কাছে কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই।

আমি যে সমস্ত দিন এবং রাতে উদাসীনতার অভিযোগ করেছি, তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমার মতে, উদাসীনতা এই যে এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমি লিখতে পারছি। সমাপতন: আমরা এখনও বেঁচে আছি।

আমি আমার ২৮ বছর বয়সী আত্মার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী...আমি তোমার জন্য এসব কিছুই চাইনি; আমার একটি ইচ্ছা ছিল যে আমি যে মেয়েটিকে ভালবাসি তার কাছে আমার ভালবাসা প্রকাশ করার সাহস পাওয়া। কিন্তু যুদ্ধের কারণে, আমার সাহস আজ কেবল আমার চিঠিগুলি নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি, এবং দুঃখের ভার না বারানোর প্রতি।

আবশেষে, আমি আমার আরবি ভাষার দুর্বলতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, যা এই লেখায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আঠাশটি অক্ষর আমাকে এই ক্ষমার চিঠিটি লেখার জন্য সমর্থন করতে পারেনি।

২৫ অক্টোবর, 10:20 pm

আমি জানি না কে আমাদের লিখতে শিখিয়েছে এবং কেন আমরা লিখি? লেখার উদ্দেশ্য কী এবং এর যৌক্তিকতা কী?

আমার বাকশক্তি জটিল, এবং আমার ভাষা বিভ্রান্ত এবং ভীত বলে মনে হচ্ছে। আমার চিঠিগুলো তোতলাচ্ছে, অজ্ঞাত চিৎকারে ভরা।

আমি আমার ভাষা কাছে রাখি, এবং তা দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করি যা বর্তমান ঘটনার বর্ণনা করবে… কিন্তু আমি পারি নি, আমি ব্যর্থ হই। আমি এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করি যা আমার বন্ধুদের জখম নিরাময় করবে, কিন্তু আমি পারি না, এবং আমি আবার ব্যর্থ হই।

আমি স্বাভাবিক কথোপকথন করার সম্পর্কে চিন্তা করি যা এই প্রশ্নগুলোর বাইরে হবে: (আপনি কি জল খুঁজে পেয়েছেন? আপনি কি গোসল করেছেন? আপনি কি দুপুরের খাবার খেয়েছেন? আপনি ঠিক আছেন? কাছাকাছি ছিল নাকি দূরে?) কিন্তু আমি এগুলোর বাইরে কোনো প্রশ্ন খুঁজে পেতে ব্যর্থ হই। .

আমার ভাষা ব্যর্থ হয়েছে প্রথম যে শিশুটি পুরো শহর জ্বলে উঠার বর্ণনা করার চেষ্টা করে, যখন সে তার জীবনে কখনও একটি ম্যাচের কাঠির চেয়েও বড় আগুন দেখেনি।

২৯ অক্টোবর, 6:08 pm

আহমেদ, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের হয়ে তোমার সাথে কথা বলছি..

যে হাজার হাজার টন ধুলো নিঃশ্বাস নিয়েছিল… আমার রঙ ছাই (যদি জানতে চান)…যে তার পরিবারের সদস্যদের গণনা করতে অক্ষম ছিল, যারা দুই রঙ (লাল এবং ধূসর) এর মধ্যে বিভক্ত ছিল - যদি আপনি রং দেখতে সক্ষম হন’

এখানে রং বেছে নেওয়ার বিলাসিতা নেই। লাল: তুমি রক্তে পূর্ণ। ছাই: তুমি সবেমাত্র তোমার এবং তোমার প্রতিবেশীদের বাড়ি এবং তার পাথরগুলোকে আলিঙ্গন করেছো এবং শ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এসেছো।

আহমেদ, যে একটু আগে মৃত্যু দেখেছে, এবং তার মানসিক সহায়তা কাজের অভিজ্ঞতা তাকে শিশু ও মায়েদের চিৎকার সহ্য করতে সাহায্য করতে পারেনি।

আমার শব্দগুলি আমাকে কিছু বলার জন্য এবং বাচ্চাদের বুকে কিছু রাখতে সাহায্য করতে পারেনি। আসলে আমি কাউকে দেখিনি। আমি শুধু তাদের চিৎকার থেকে জানতে পারি যে তারা বেঁচে আছে, (একটি টিপ: সর্বদা আপনার প্রিয়জনদের চিৎকার চিনে রাখুন, এটিই একমাত্র উপায় তাদের চিনতে পারার এবং তারা বেঁচে আছে কিনা তা জানতে পারার)।

আমি, আহমেদ, আমার সমস্ত স্বপ্নকে ঘৃণা করি। আমার কাছে আর কোন সুন্দর পরিচিত স্মৃতি নেই, কোনো বন্ধু চিনতে বাকি নেই, বা থাকার জন্য নিরাপদ বাড়ি নেই।

আহমেদ, এবং আমি এই বিশ্বকে ঘৃণা করি যা আমার হৃদয় এবং শিশুদের হৃদয়ের চেয়ে বড় এই যুদ্ধ থামাতে পারে না।

আমি আহমেদ, এবং আমি এই টেক্স্টটা সাজাতে চাই না, কারণ আমি তাড়াহুড়োতে আছি। অন্য একটি শেল আমাকে মিস করার আগে আমি এটি প্রকাশ করতে সক্ষম না হতে পারি, এবং আমরা উভয়ই, টেক্স্ট এবং আমি, আলো দেখে ফেলি।

8 নভেম্বর, 8:24 pm

এখানে প্রশ্ন হল: কোনটি বেশি দ্রুততর, একটি রকেট যা শব্দ বাধা অতিক্রম করে, নাকি একটি শিশুর চিৎকার, যে তার মুখ দিয়ে রকেটটি ছিঁড়ে থু করে ফেলে দেয়,  দুটি শাহাদাত পাঠ করার মাঝে?

নিজেকে খুব বেশি প্রশ্নে মগ্ন কর না, কারণ তুমি যখন একটি স্মার্ট, যৌক্তিক উত্তর খুজছো, তখন আরেকটি শিশু চিৎকার করতে করতে পড়ে যায়।

এই প্রশ্নে আশ্চর্য হবেন না, এটি আপনাকে নির্দেশিত করা হয় নি.. আমি নিজেকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, কারন এটিই আমাকে পাগলামি থেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়!

আমি আগে পাগলদের ডিফেন্ড করতাম। আমি ছিলাম তাদের বুদ্ধিমান নায়ক এবং ত্রাণকর্তা। আমি ভয় পেতাম যে কেউ তাদের সম্পর্কে কথা বলবে। আসলে তাদের সম্পর্কে কেউ কথা বলবে তা আমি পছন্দ করতাম না। আমি কেবল তাদেরকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখে কথা বলতাম। যুদ্ধের আগপর্যন্ত, এটিই ছিল ।

এখন সেই পাগল লোকটি আপনার সাথে কথা বলছে, যার চুল ছাই এবং সে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে না (এটি সম্পর্কে কাউকে বলবেন না… এটি আমার এবং বাচ্চাদের মধ্যে একটি গোপন বিষয়। আমি তাদেরকে আমার নিঃশ্বাস ধার দিলাম যাতে তারা তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে, যতগুলো রকেট তারা ধরেছে,তা থু করে বের করতে পারে।)। এটা সম্পূর্ণ পাগলামি, তাই না? ঠিক আছে. আসল কথা হল পাগলের সর্দার, তোমাকে জিজ্ঞেস করছে: 'আজ কেমন আছো, সুস্থ মানুষ?'

 আমি জানি...এটা আরেকটা প্রশ্ন.. ঠিক আছে, আপনি এটা নিয়ে ভাবতে পারেন।

১১ নভেম্বর, 6:22 pm

তিনি একটি অঘোর ঘুম থেকে জেগে ওঠেন..তার পছন্দের সঙ্গীত বাজান, সম্ভবত জ্যাজ, যদি তার স্বাদ ভালো হয়ে থাকে। তার কাছে প্রচুর পানি রয়েছে। সঙ্গীত বাজানোর সময় তিনি সম্ভবত উষ্ণ স্নান করবেন, তারপর তিনি ধীরে ধীরে তার নাস্তা করবেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলবেন, "আমি তোমাকে ভালোবাসি" এবং সে হয়তো ভালোবাসায় জবাব দেবে। তিনি তার রাশিফলের ভাগ্য দেখার জন্য সকালের সংবাদপত্রটি তুলে নেন (আমার মনে হয় তিনি মীন রাশি, তার সিদ্ধান্তহীনতার জন্য)। তিনি পোশাক পরেন, তার আনুষ্ঠানিক স্যুট পরেন, এবং এই দিনের জন্য কোন রঙের টাই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে তা নির্ধারণ করতে পারেন না (তিনি লাল বেছে নেবেন কারণ তিনি এই রঙটিকে এবং তার তাত্পর্যকে ভালোবাসতে অভ্যস্ত), এবং সম্ভবত তিনি কিছু পারফিউম স্প্রে করেন, তিনি পছন্দ করেন বলে নয়, বরং এটি করার প্রচলিত বলে এবং সম্ভবত তার পারফিউমের ব্র্যান্ড (সাউভেজ)। সে তার ভারী সুরক্ষিত গাড়িতে উঠে, একটি নিরাপদ কনভয়ে তার কাজে যায়, আমাদের একটি গোপন কথা বলার জন্য।

এবং যখন এই সব ঘটছে, আমরা গাজায়: আমরা মরছি, আমরা চিৎকার করছি, আমরা রাতকে অভিশাপ দিচ্ছি। আমরা প্রশংসা করি, আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমরা ভয় পাই, আমরা ঘুমাই, আমরা জেগে উঠি, আমরা আতঙ্কিত হই, আমরা বিস্মিত হই, আমরা আবার চিৎকার করি, এবং আবার, আমরা ভয় পাই, আমরা মরে যাই, আমরা ধ্বংসস্তূপের নীচে থেকে বের হই, আমরা রাতকে অভিশাপ দেই, এবং তারপর আমরা একটি গোপন কথা শুনতে অনুসন্ধান করি.

আমরা তখন লাল টাই পরা স্যুট পরা লোকটিকে বলতে শুনি: (আমরা গাজার যুদ্ধের নিন্দা করি), এবং আমরা আবিষ্কার করি যে তার শব্দগুলো দুর্গন্ধযুক্ত, কারণ সে আজ সকালে সেগুলো পরিষ্কার করতে ভুলে গিয়েছিল।

১৮ নভেম্বর, 2:52 pm

এটা যুদ্ধের তেতাল্লিশতম দিন। আমি সেদিন লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, যেদিন আমি আমার বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সাথে সাথে, আমার শব্দ এবং আমার কণ্ঠ হারিয়েছিলাম।

কাকতালীয়ভাবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যুদ্ধের বয়স কত, ঠিক যেভাবে আমি এখনও বেঁচে আছি, যেহেতু আমি এই পোস্টটি লেখার মুহুর্ত পর্যন্ত কোনও মিসাইল আমাকে মিস করেনি বা আমাকে একটি সংখ্যায় পরিণত করেনি।

আমি খোলা চোখে (যুদ্ধ) নামক এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে বাস করছি, যাতে আজ পর্যন্ত দুই ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ, নিরবচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ ও পরিতৃপ্ত ঘুম উপভোগ করতে পারিনি।

আমার দৈনন্দিন জীবিকা খুবই সীমিত, এবং আমি নিজেকে কফি খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে করি, এমনকি সকালে না হলেও (যেহেতু আমি কফি তৈরির জন্য সাশ্রয়ী উপায় খুঁজতে অনেক সময় ব্যয় করি) এবং নিম্ন ধরন এবং মানের  হওয়া সত্ত্বেও আমি সফল হয়েছি। আজ পর্যন্ত আমার শালীন অভিজ্ঞতা অনুযায়ী: কফি সবচেয়ে দীর্ঘতম সময়ের জন্য  ক্ষুধা মেটায়।

আমার বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগের কোন মাধ্যম নেই, এবং আমি অনেক খবর জানি না। আমি আমার চারপাশের খবর জানি, নিজের চোখে যা পর্যবেক্ষণ করি তার মাধ্যমে। আমার জানা খবরের সিরোনাম এই: বাজারে কোন সবজি/বা ভোজ্য জিনিস নেই। আমার প্রতিবেশীর জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সিগারেটের দাম সোনার সমান হয়ে গেছে। এক বন্ধু এক সপ্তাহ এবং কয়েক দিন যাবত ভেজা কাগজ দিয়ে শরীর মোছার পর, (জল বাঁচাতে) শ্যাম্পু ব্যবহার না করেই গোসল করতে সফল হয়েছে। গোটা বিশ্ব এই যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।

২৪ নভেম্বর, 5:21 pm

যে সকালে পৃথিবীর মঙ্গলতা শেষ হয়ে যায়।

আমি এখনও বেঁচে আছি।

আমি আমার অনেক বন্ধু এবং আত্মীয়দের আমার সামনে মরতে দেখেছি। প্রাথমিক চিকিৎসা এক যুক্তিসঙ্গত জিনিস। এইভাবেই, আমি আমাদের পাশের বাড়িতে বোমা হামলায় ব্যথা পাওয়া একটি শিশুকে সাহায্য করেছি, যে কান্নাকাটি করছিল। অনেক ঘণ্টা যৌক্তিক প্রাথমিক চিকিৎসার পর; যুক্তি শিশুটিকে সাহায্য করেনি, এবং অনেক প্রশ্ন নিয়ে সে মারা যায়:

প্রথম প্রশ্নঃ যুদ্ধ কেন?

দ্বিতীয় প্রশ্নঃ এই ​​যুদ্ধ কবে পর্যন্ত?

তৃতীয়: যুদ্ধ থামাতে কত শিশু লাগে?

চতুর্থ: স্বাভাবিক জীবন কেমন?

পঞ্চম: যিনি আমাদের যুদ্ধে ফেলেছেন, তিনি কি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের হৃদয় এটি সহ্য করার জন্য খুব ছোট?

যে শিশুটি তার প্রশ্নের ভেতর ডুবে যাচ্ছিল, আমি তাকে সাহায্য করতে পারিনি এবং তার প্রশ্ন চিহ্নগুলি, বিশেষত, আমার ডান কাঁধে আঘাত করেছিল।

আমার বেঁচে থাকার উপায় খুবই সীমিত হয়ে গেছে। আমার স্মৃতিশক্তি শিশুদের চিৎকার সংগ্রহ করা বন্ধ করে না, এবং আমার হৃদয় সবকিছুর জন্য কাঁদছে, থামছে না।

বিশ্বে যাঁরা দামি স্যুট পরেন...আপনি খুব ভালো করেই জানেন কার কথা বলছি...আমাদের একা ছেড়ে দিন, আমাদের প্রশ্নে ডুবেতে দিন, নতুন প্রশ্ন উদ্ভাবন করার একেবারেই দরকার নেই। এবং যুদ্ধ বন্ধ করুন।

২৯ নভেম্বর, 2:00 pm

যুদ্ধবিরতির সময় আমরা কী করব?

যুদ্ধে ফেরার ভয় করবো।

৩ ডিসেম্বর, 6:55 am

আমি এখন লিখতে লিখতে কাঁপছি, এবং আমি নিজেকে যুক্তি দিয়েছি যে আমি ভয়ে নয়, ঠান্ডায় কাঁপছি।

আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি কেন এই সব আসলে ঘটছে, এবং আমার কাছে ভয়ের সত্যিকারের সংজ্ঞা কী, যখন আমি প্রথম পালিয়ে গিয়েছিলাম, আমাদের দিকে উড়ে আসা মিসাইলের টুকরোর শব্দ শুনে ।

আমি কিসের ভয় পেয়েছিলাম? পলায়নকে তারা "আত্মার মাধুর্য" কেন বলে, যখন যা ঘটছে তা মাধুর্যের বিপরীত?

আমি তৃতীয় বা চতুর্থবারের জন্য ভয়/মৃত্যু থেকে বেঁচে গেছি (আসল গণনা জানি না), এবং এখানে বেঁচে থাকা কোন কিংবদন্তি কাজ নয়।

যে ভীত ব্যক্তিটি আপনার সাথে কথা বলছে সে নয় সুপারহিরো নয় ঐতিহাসিক কিংবদন্তি। সে একজন খুব সাধারণ মানুষ, যার কয়েকটি সাধারণ স্বপ্ন রয়েছে: আমার চারপাশে ঘটা সবকিছু নিয়ে আবার রসিকতা করতে সক্ষম হওয়া…খুব সাধারণ মানুষ হওয়া, এর বেশি কিছু নয়।

আমি এখন লিখতে লিখতে কাঁপছি, ঠান্ডা এবং ভয়ের কারণে।